সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন
এম এ সাত্তার:
কক্সবাজার সদর উপজেলার ‘এলজিইডির একটি পাকা রাস্তা নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মে’র অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, পিএমখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ছনখোলা মালিপাড়া এক্সমিলিটারি রাস্তার মাথা থেকে ছনখোলা ঘাটঘর বাজার হয়ে খুরুশকুল কুলিয়াপাড়া পর্যন্ত নির্মাণাধীন এই রাস্তাতে বালুর পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে বাঁকখালী নদীর লবনাক্ত ভরাট বালু ও নিম্নমানের ইটের খোয়া। এতেও মানা হচ্ছে না খোয়া ও বালুর অনুপাত। আবার রাস্তার কাজে ব্যবহার করা এসব নদীর বালু ও নিম্নমানের খোয়া মিক্সের মধ্যে পাড়াখালের লবন পানি ছিটিয়ে রুলার করে দিচ্ছে ঠিকাদার আকরাম সিকদার।
একটি সূত্র জানায়, বাঁকখালী নদী থেকে শক্তিশালী ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে মজুদ করছে একটি চক্র। নদী থেকে প্রতি ফুট বালু ৫টাকা মুল্য ফুল তুলে দেন বাল্কহেড হাফিজ। সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে উত্তোলন করা এই অবৈধ বালু ২০ টাকা দরে (এক ফুট) কিনে নিয়ে রাস্তায় ব্যবহার করছে ঠিকাদার। এ প্রকল্পে প্রায় দুই হাজার গাড়ি (প্রতি ডাম্পারে পরিমাণ ১০০ ফিট, মূল্য ২০০০ টাকা) বালু বা ৪০ লক্ষ টাকার বালু প্রয়োজন হবে বলে আনুমানিক ধারণা করছে এ রাস্তায় কর্মরত এক শ্রমিক। তাছাড়া এখন এক তৃতীয়াংশ রাস্তায় হাজারের কাছাকাছি গাড়ি বালু ফেলা হয়েছে বলে জানান সে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তার কাজ তদারকির দায়িত্বে এলজিইডির দায়িত্বপ্রাপ্ত কারো দেখা মিলছে না। এ ছাড়া রাস্তার কাজ শুরুর আগে ঠিকাদারের নাম, প্রকল্পের নাম, প্রাক্কলিত ব্যয়, চুক্তির মূল্য, কাজের শুরু ও মেয়াদ লিখে সাইনবোর্ড টাঙানোর কথা থাকলেও সেটা নেই। এখন রাস্তার কাজ চলছে অথচ টাঙানো হয়নি সাইনবোর্ড। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মি এন্টারন্যাশনাল দায়সারাভাবে কাজটি সম্পাদনের পাঁয়তারা করছেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, উক্ত রাস্তাটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব পেয়েছে মি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের শুরুতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করে এ পর্যন্ত চারটি মিনি কালভার্টের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আর সাববেজের কাজ সম্পন্ন করেন প্রায় অর্ধেকের মতো।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন রাস্তার মধ্যে কাজ করছেন শ্রমিকদের একটি দল। পুরো রাস্তাজুড়ে নদীর লবণাক্ত বালু ও নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। ছনখোলা খেয়াঘাট সংলগ্ন রাস্তার পাশে রাখা আছে প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে স্থানীয় বাঁকখালী নদী থেকে অবৈধ বাল্কহেড দিয়ে তোলা লবনাক্ত বালু। পৌরসভার এসএমপাড়ার বাসিন্দারা প্রতিবেদককে বলেন, বাঁকখালী নদী থেকে শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন ও অবৈধ বল্কহেড দিয়ে লবনাক্ত বালু তুলে ঘাট সংলগ্ন রাস্তার পাশে মজুদ করে রাখা হয়। প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণে মাটি ভরাট, বেড প্রস্তুতকরণ, বক্স কাটিং, বালু ভরাটকরণ, এজিং, করার কথা থাকলেও কিছুই মানা হচ্ছে না।
আরো দেখা গেছে, রাস্তা নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে এ রাস্তায় ব্যবহৃত (এইচবিবি) মানহীন ইটের টুকরো/খোয়া। বালুর পরিবর্তে দেওয়া হচ্ছে নদীর লবন বালু। বিদ্যুৎ মটরের সাহায্য খালের লবন পানিতে ভিজিয়ে করা হচ্ছে রুরাল। প্রথম শ্রেণির ইটের খোয়া ব্যবহার না করে দেওয়া হয়েছে নষ্ট /অকেজো ইট। মালীপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েক শ্রমিক কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিচ্ছেন। রাস্তাতে নিম্নমানের ইটের টুকরো, লবন বালু ব্যবহারের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে শ্রমিকরা জানান, ঠিকাদার যা দিচ্ছে তা দিয়ে কাজ করছে তারা।
স্থানীয় আবু বক্কর বলেন, ‘আমরা শুনেছি পিএমখালী ইউপির ২নং ওয়ার্ড মালিপাড়া থেকে খুরুশকুল ইউপির কুলিয়াপাড়া পর্যন্ত রাস্তা হবে। অথচ এ রাস্তায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে ঠিকাদার। আপত্তি জানিয়েও লাভ হয়নি। আমারা এতদিন ফ্লাটসলিন, এইচবিবি, কাঁচা রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করছি। দুই ইউনিয়নের মধ্যকার সংযোগ রাস্তা হচ্ছে বলে খুশি হয়েছি। কিন্তু রাস্তার কাজের মান দেখে হতাশ হচ্ছি দিনদিন। যেভাবে কাজ করা হচ্ছে টিকবে ক’দিন একমাত্র আল্লাহ জানেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হামিদ, সোহেল রানা, কবির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, পূর্বপুরুষেরা তো বসবাস করেছেই ‘আমি/আমরা ৩০-৩৫ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে রাস্তাটি পাকা হচ্ছে, তাও কাজের মান দেখছি নিম্নমানের। রাস্তায় বালু ও খোয়াতে খালের লবনাক্ত পানি দিয়ে রুলার করে দেয়া হচ্ছে।
এলাকার সুবিধাভোগী মানুষের অভিযোগ, রাস্তার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নদীর লবনাক্ত বালু। সেইসব নিম্নমানের খোয়া ও লবন বালু মিশিয়ে রাস্তায় দিচ্ছে ঠিকাদার। দরপত্র অনুসারে খোয়া ও বালু মিশ্রণ অনুপাত মানছে না। এসব বিষয়ে ঠিকাদারের লোকজনকে জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, এলজিইডির রাস্তাগুলোর নির্মাণ ও সংস্কারে যেসব ঠিকাদার কাজ করেন তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। ঠিকাদার নিজে ক্ষমতাশালী কিংবা ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় প্রভাব খাটিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে ঠিকাদার নিম্নমানের কাজ করিয়ে নিতে বাধ্য করেন স্থানীয় প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করে।
রাস্তা নির্মাণ কাজে নদীর লবন বালু ও লবণাক্ত পানি ব্যবহারে অনুমতি আছে কি না, জানতে চাইলে এ প্রকল্প কাজ দেখাশোনার দায়িত্বরত তোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তি মুঠোফোনে জানান, নদীর লবন বালু রাস্তায় দেয়ার অনুমতি দিয়েছে এলজিইডি অফিস। রাস্তায় ব্যবহৃত আগের ইটগুলো রাস্তার মুল্যের সাথে ধরে দেয়া হয়। তাই এসব ইট রাস্তা নির্মাণ কাজে ব্যবহার করছে। সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিবেন। প্রকল্পের নাম, প্রাক্কলিত ব্যয়, চুক্তির মূল্য কত জানেনা। তবে ইঞ্জিনিয়ার হেলাল সাহেব এই প্রকল্প দেখাশুনা করছেন তার সাথে কথা বললে বিস্তারিত জানা যাবে।
ঠিকাদার আকরাম সিকদারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সে রোজা রমজানের দিন বলে রাতে (২৭ মার্চ) কথা বলতে রাজি হননি। অফিস টাইমে যোগাযোগ করতে বলেন। পরদিন ফোন রিসিভ করেননি।
যোগাযোগ করা হলে সদর উপজেলা প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম প্রতিবেদকের বক্তব্য শুনে কোন মন্তব্য করেনি। বলেন, অফিসে এসেছেন মাত্র, পরে কথা বলবেন।
ভয়েস/জেইউ।